Business

অখ্যাত ভারতীয় কোম্পানির ক্যাপসুল কিনতে বাধ্য করা হয়েছে: স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী


ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহ করা ক্যাপসুলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ভিটামিন প্লাস ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জের সার্কিট হাউজে জাতীয় ভিটামিন প্লাস ক্যাম্পেইনের (দ্বিতীয় রাউন্ড) জন্য সরবরাহ করা ভিটামিন ক্যাপসুলের নমুনা পর্যবেক্ষণের সময় সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মামলা করে ভারতীয় একটি অখ্যাত কোম্পানির কাছ থেকে নিম্নমানের ভিটামিন প্লাস ক্যাপসুল কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। সরবরাহ করা ক্যাপসুল কৌটার সঙ্গে  লেগে আছে, আলাদা করা যাচ্ছে না।

ক্যাপসুলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ভিটামিন প্লাস ক্যাম্পেইন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় কোম্পানিটির কোনো সুনাম নেই। মামলা করে তারা আমাদের ক্যাপসুল কিনতে বাধ্য করেছে
তাদের সরবরাহ করা লাল ক্যাপসুল নিয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন রকম হলো পরীক্ষার পর তা বলা যাবে।

তবে দেশের কোম্পানি থেকে কেনা সবুজ রঙের ট্যাবলেটে কোনো সমস্যা নেই। প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান বলেন, নিম্নমানের এই ভিটামিন ক্যাপসুলের কারণে শিশুদের যেন কোনো সমস্যা না হয়, এজন্য আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিগগিরই ভিটামিন প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হবে। সময় জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক রাজিয়া সুলতানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমএ আফজল, জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদ, জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক ডা. এমএ ওয়াহাব প্রমুখ ছাড়াও জেলা প্রশাসন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আজ শনিবার সারা দেশে কোটির উপরে শিশুকে এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল। এই ঘটনা তদন্তে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে সরকার। শিশুদের এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়ে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। তবে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য আনা ক্যাপসুল দিয়েই এই রাউন্ড দ্রুত সারা হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এগুলোর মেয়াদ আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত। মহাপরিচালক নিজে পরিস্থিতি দেখার জন্য গতকাল গাজীপুরের দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান। সেখানে একটি ক্লিনিকে সরবরাহকৃত ক্যাপসুলে কোনো সমস্যা দেখতে পাননি। এই ওষুধগুলো আলাদা আলাদা থাকার কথা। কিন্তু অপর ক্লিনিকে ওষুধের কৌটা খুললে দেখা যায় ২০/২৫টি ক্যাপসুল এক সঙ্গে লাগানো। তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ের কোথাও কোথাও থেকে তাদের কাছে খবর আসে ক্যাপসুল একসঙ্গে লেগে থাকার। জন্য কর্মকর্তারা আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি। তাই ক্যাপসুল খাওয়ানো আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অধিদপ্তর। এই কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ক্যাপসুল পরীক্ষা করার পর বলা যাবে এর মান খারাপ ছিল কি না। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও অপর  একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই ক্যাম্পেইন আগামী ২৬শে জানুয়ারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে আগামীকাল রোবরার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈঠক করা হবে। স্থগিত হওয়া ভিটামিন ক্যাপসুল দুমাস আগেই সরবরাহ করা হয়। এগুলো ওষুধ প্রশাসনের অধীন জাতীয় ল্যাবরোটরিতে পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে  ডিজি উল্লেখ করেন।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ভিটামিন -ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিটামিন -ক্যাপসুল পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মী কর্মকর্তারা ক্যাপসুলের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা ঘটনাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানান। এরপর গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মী স্বেচ্ছাসেবকদের শিশুদের ভিটামিন -ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল। স্থায়ী টিকা কেন্দ্র ছাড়াও বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ব্রিজের টোল প্লাজা, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রে শিশুদের ভিটামিন- খাওয়ানোর কথা।

মূলত রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে দেশের শিশুদের ভিটামিন- ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে রাতকানা রোগের প্রকোপ অনেক কমে গেছে। এই কর্মসূচিতে থেকে ১১ মাস বয়সী সব শিশুদের ১টি করে নীল রঙের ভিটামিন ক্যাপসুল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে ১টি করে লাল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা। ভিটামিন দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন অভাবে রাতকানাসহ চোখের অন্যান্য রোগ এবং রক্তশূন্যতাও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাপসুল কেনার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রথমে একটি দেশি ওষুধ কোম্পানি সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছিল। ওই কার্যাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যায় একটি বিদেশি কোম্পানি। আদালত ওই বিদেশি কোম্পানিকে সরবরাহের কাজ দেয়ার নির্দেশ দেন। অ্যাজটেক নামে ভারতীয় কোম্পানি এরপর থেকে লাল রঙের ক্যাপসুল সরবরাহ করে আসছে 


Post a Comment

0 Comments

class="fb-customerchat" "attribution"=setup_tool page_id="226269794967384">