Business

এই শীতে তরুণীদের ব্লেজার


তাপমাত্রার পারদের নিম্নগামিতার সময়ে আমাদের দেশের ফ্যাশনে দেখা যায় সর্বাধিক অনন্যতা। বছরের বাকি সময়ের চেয়ে শীত ঋতুর দুই মাসে পোশাকে ভিন্নতা নিয়ে আসা যায় বলেই ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে সময়টা আকাঙ্ক্ষিত। মেয়েদের পোশাক হিসেবে আমাদের দেশে রকমারি সোয়েটার আর শালের জনপ্রিয়তা বহু বছরের। এর বাইরে তেমন একটা শীত পোশাকে আগ্রহী হতে দেখা যেত না মেয়েদের। কখনও পোশাকের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে, কখনও বিপরীত রঙের শীত পোশাক ব্যবহার করত মেয়েরা। শাড়ির সঙ্গে অনেকে ব্যবহার করত উলের ব্লাউজ। ফ্যাশনের পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে বেশ লম্বা সময় ধরেই। শীত পোশাকের তালিকায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন ব্লেজারের অবস্থান বেশ উপরের দিকে। ব্রেজারের ঢঙ বেশ মন কেড়েছে হাল আমলের তরুণীদের। 

শীতের সন্ধ্যায় প্রিয় গায়কের গানে তাল মেলাতে মেলাতে গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছিলেন দুই তরুণী। তাদের গায়ে রঙিন ব্লেজার দেখে জানতে চাইলাম এই পোশাক বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে। জানালেন, শীতের পোশাক হিসেবে রোজ গায়ে জড়াতে হচ্ছে বাড়তি পোশাক। এ সময়ের পোশাকের ক্ষেত্রে তারা দু'জনই পছন্দ করেন একটু আঁটসাঁট পোশাক। এ জন্য ব্লেজার তাদের প্রথম পছন্দ। এ ধরনের পোশাক একই সঙ্গে এনে দেয় উষ্ণতা ও ফ্যাশন। বিশ্বায়নের এ যুগে হাওয়া বদল শুরু হয় প্রধানত পশ্চিমের দেশগুলোর ফ্যাশন ভাবনা থেকে। প্রযুক্তি যাপিত জীবনকে দিয়েছে তথ্য আহরণের ব্যাপক সুযোগ। বিশ্বজুড়ে কোথায় কী হচ্ছে জেনে নেওয়া সম্ভব মুহূর্তেই। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের যোগাযোগ বিষয়কে করে তুলেছে নিয়মিত। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার থেকে পিনটারেস্ট; সর্বত্র ফ্যাশন আইকনরা তাদের ভাবনা জানাতে সরব। এর প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ কয়েক বছর ধরে। ব্লেজারের জনপ্রিয়তার পেছনেও তেমন কিছু কারণ অসম্ভব নয়। 

মেয়েদের পোশাক হিসেবে বর্তমানে ব্লেজার সামনে এসেছে, তা কিন্তু নয়। বছর ধরেই ব্লেজার ব্যবহার করে আসছেন মেয়েরা। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম ব্লেজার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ক্যামব্রিজের লেডি মার্গারেট বোট ক্লাব থেকে এ শব্দটি ব্যবহারের কথা পাওয়া যায় ইতিহাসের পাতায়। ট্রেন্ডটি এর পর আটলান্টিক পাড়ি দেয়। সঙ্গে বেশ কিছু পরিবর্তন নজর কাড়ে। আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের লুজ ফিটিং জ্যাকেটকে তখন নামকরণ করে ব্লেজার হিসেবে। বিখ্যাত ব্র্যান্ড কোকো শ্যানেল মেয়েদের জন্য ব্লেজার তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্লেজার এক সময় মেয়েরা গায়ে জড়াতে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানকে পুরুষদের মতোই সাধারণ করে তুলতে। বলা যায়, লিঙ্গগত ধারণাকে ম্লান করে কাজের জায়গায় পেশাগত আচরণকে আরও বেশি দৃষ্টিগোচর করে তোলা ছিল এর অন্যতম কারণ। তখনকার সময়ে ঘরের বাইরে মেয়েদের উপস্থিতিকে সেভাবে স্বাগত জানানো হতো না, যা কর্মজীবী মেয়েদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্লেজারকে তাই বলা যেতে পারে এমন একটি পোশাক, যা ভূমিকা রেখেছে ঘরের বাইরে নারীর অবস্থান তৈরি করতে। 

ফ্যাশন এখন বেশ বদল করেছে। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্য এখন একই ধরনের পোশাক ব্যবহারের চল এসেছে। এখন মেয়েরাও ছেলেদের পাশাপাশি ফরমাল কিংবা ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে বেছে নিচ্ছে ব্লেজার। তাই ফরমাল পোশাকের বলয় ভেঙে ক্যাজুয়াল ধাঁচেও তৈরি হচ্ছে মেয়েদের ব্লেজার। ব্যবহারের ধরন যাই হোক না কেন, শরীরের সঙ্গে মানানসই হিসেবে ব্লেজারের জনপ্রিয়তা কিন্তু দিন দিন বাড়ছেই।

ব্লেজারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে এর কাটিং ও ফিটিং। ব্লেজারের রঙ ও নকশা যতই সুন্দর হোক না কেন তার ফিটিং ঠিকঠাক না হলে মোটেও ভালো দেখাবে না। কাঁধের কাছে ঝুলে থাকলে এবং মাপে বেশি ঢিলেঢালা হলে চলবে না। কিছু ব্লেজারে বেল্ট থাকে। এতে সুবিধামতো ফিটিং করে নেওয়া যায়। 

এখন খাটো ঝুলের ব্লেজারের চল। কোমর পর্যন্ত লম্বা ব্লেজারই এখন তরুণীরা বেশি পছন্দ করছেন। প্যাটার্নে আসছে এক বোতাম, দুই বোতাম ও চার বোতাম, সব ধরনের ব্লেজারই মিলবে বাজারে। মেয়েদের ব্লেজারের ফ্যাশনে এখন চলছে স্লিম ফিট ফ্যাশন। ব্লেজারের কাটিংয়ে রাউন্ড শেপটাই এখন সবার পছন্দ। পেছনে দুই প্রিন্ট ব্যবহার হচ্ছে এখনকার ফ্যাশনে। শারীরিক গঠন মোটা হলে এক বোতাম, চিকন ও মাঝারি গড়ন হলে দুই-তিন বোতাম দিয়ে ব্লেজার পরলে ভালো দেখাবে। তবে এক বোতামের ব্লেজারেই মেয়েদের বেশি মানায়। এ ছাড়া আরও অনেক ডিজাইন রয়েছে। যেগুলো শরীর, ত্বক পছন্দের সঙ্গে উপযুক্ত। ব্লেজার বা কোট পরার সময় শরীরের গঠন ও মুখের গড়ন বিবেচনা করা উচিত। উচ্চতা কম হলে স্ট্রাইপ ব্লেজার পরা ভালো। এক রঙের চেক ব্লেজার বেশি মানানসই, যাদের উচ্চতা বেশি। যারা মাঝারি গড়নের, তারা যে কোনোটিই পরতে পারেন। মাথায় রাখতে হবে গাঢ় ব্লেজারের সঙ্গে হালকা রঙের শার্ট আর হালকা রঙের ব্লেজারের সঙ্গে গাঢ় রঙের শার্ট মানানসই। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায় ক্যাজুয়াল ব্লেজারের চাহিদা বেশি। রেডিমেড ক্যাজুয়াল ব্লেজারই নজর কাড়ছে সবার। ক্যাজুয়াল ব্লেজারে আছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। কয়েক দিন পরপরই বদলাচ্ছে রূপ। ডিজাইনে আসছে নতুনত্ব। পোশাকের দোকানে শোভা পাচ্ছে পাঁচ বাটন হ্যান্ডস্টিচ, অ্যামব্রয়ডারি, হাতের কাজ করা, বাটনলেস, এক বাটন, জ্যাকেট টাইপ, টপসিন, বেনকলার, শার্ট কলারসহ অসংখ্য ডিজাইনের ব্লেজার। বেশি চলছে কালো রঙের ছয় বাটন শার্টকলার ব্লেজার। বিভিন্ন ডিজাইনে মিশ্র ব্লেজারও পাওয়া যাচ্ছে। ব্ল্যাক, মেরুন, অ্যাশসহ বিভিন্ন রঙের ব্লেজার তৈরি করা হয়েছে পলিউল বা উইন্টার ফেব্রিকে। মেয়েদের কাটিংয়ে স্বাতন্ত্র্য আছে, তবে ডিজাইনে ছেলে বা মেয়েদের তেমন পার্থক্য নেই। ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভ নিয়ে এসেছে নানা ধরনের ব্লেজার ও জ্যাকেট। এ বিষয়ে লা রিভের ডিরেক্টর (ডিজাইন অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ) মুন্নুজান নার্গিস বলেন, 'বর্তমানে মেয়েদের ফ্যাশনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে নানা ঢঙের ব্লেজার। বৈশ্বিক এ ধারার সঙ্গে মিল রেখে আমরা নিয়ে এসেছি ব্লেজার। এ ধরনের পোশাক তৈরিতে আমরা মূলত ব্যবহার করেছি দু'ধরনের ফেব্রিক। ব্লেন্ডেড কটন ও বুকলে। তাপমাত্রাকে মাথায় রেখে আমরা বেছে নিয়েছি এ ধরনের ফেব্রিক। প্যাটার্ন একটু ঢিলেঢালা রাখা হয়েছে। রঙে জায়গা করে নিয়েছে প্যাস্টেল ও উজ্জ্বল ধরনের রঙ।'

Post a Comment

0 Comments

class="fb-customerchat" "attribution"=setup_tool page_id="226269794967384">